ইসলামের দৃষ্টিতে ধৈর্য এর গুরুত্ব ও পুরস্কার
+![](/media/sobor.jpg)
From MuslimAid
+★ Introduction
++ ধৈর্য, আরবিতে যাকে বলা হয় 'সবর', ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এটি শুধু মাত্র কষ্ট ও দুর্যোগের সময়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা, স্থিতিশীলতা, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়। ইসলামের শিক্ষা মতে, ধৈর্য হলো এক প্রকার পরীক্ষার মাধ্যমে ঈমানদারের বিশ্বাস এবং ইবাদতের স্থায়িত্বের প্রমাণ। কুরআন ও হাদিসে ধৈর্যের গুরুত্ব এবং এর পুরস্কার সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা ধৈর্যের প্রকৃত অর্থ, এর বিভিন্ন প্রকার, এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ধৈর্যের গুরুত্ব আলোচনা করব। +
+ +★ ধৈর্য বলতে কি বোঝায়?
+আরবিতে ধৈর্য কে সবর বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ সহিষ্ণুতা, ধীরতা ইত্যাদি। বিপদ-আপদ,দুঃখ,উদ্বেগ ইত্যাদি সময়ে নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণে রেখে আল্লাহ এর ওপর ভরসা করাকে ধৈর্য বলা যায়। ইসলামে ধৈর্য এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। কুরআনে ও হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় ধৈর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনেকেই ধৈর্য বলতে শুধুমাত্র বিপদ আপদের সময় আল্লাহ এর ওপর ভরসা রাখাকে ধৈর্য মনে করেন। কিন্তু ধৈর্য এর পরিধি আরও বেশি। + বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহ এর নিষেধ/হারাম থেকে বিরত থাকা এবং কষ্ট করে আল্লাহর ইবাদত করা ধৈর্য এর অন্তর্ভুক্ত।
+★ ধৈর্য কত প্রকার ও কি কি?
++ ধৈর্য কে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ +
+-
+
- অন্যায়-অপরাধ ও যেকোনো হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। +
- ইবাদতে আল্লাহর আনুগত্য ও সৎ কর্মের জন্য কষ্ট স্বীকার করা। +
- বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ করা। +
+ আমরা মূলত ৩ নং কেই ধৈর্য মনে করে থাকি। +
++ ★ ধৈর্য সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? +
++ ধৈর্য এর পুরষ্কার সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস এ বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ আছে। ধৈর্য মুমিনের বিশেষ গুন। সুরা বাঁকারা এর ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, +
++
++'হে ঈমানদারগণ! তোমরা সাহায্য চাও সবর ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবরকারীদের সাথে আছেন।' (সুরা বাঁকারা, আয়াত-১৫৩)
+
+
+ এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকার অঙ্গিকার করেছেন। আবার সুরা ইমরান এ আল্লাহ তায়ালা বলেন, +
++
++'হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক, আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।' (সুরা ইমরান, আয়াত-২০০)
+
+
+ এসব আয়াতের মাধ্যমে ইসলামে ধৈর্য এর গুরুত্ব বোঝা যায়। যেকোনো মুমিন ব্যাক্তি বিপদে পরলে তাকে ধৈর্য এর উপদেশ দিতে কুরআন এ বলা আছে। আল্লাহ বলেন, +
++
++১. সময়ের শপথ,
+২. নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মাঝে নিপতিত,
+৩. কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে হকের এবং উপদেশ দিয়েছে ধৈর্যের।
+(আল-আসর, আয়াত ১-৩)
+
+
ধৈর্য মুমিনের বিশেষ গুন। মুমিন ব্যাক্তি যখন বিপদে পড়ে, তখন সে হতাশ না হয়ে আল্লাহ এর ওপর ভরসা করে। সে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে বিরত থাকে। এরকম চরিত্রের মানুষের জন্য আল্লাহ পরকালে মর্যাদাপুর্ন পুরস্কার রেখেছেন। দুনিয়া চিরদিনের জন্য নয়। তাই দুনিয়া নিয়ে কারও অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়। বরং মুসলমানদের উচিত বিপদ-আপদে মহান আল্লাহ এর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি ইবাদত করা। এবং হতাশ হওয়া যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
++
++'তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না, যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরা জয়ী হবেই।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯)
+
+ +
+ ★ ধৈর্য এর পুরস্কার +
+ ++ যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদের কে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিনা হিসাবে পুরস্কার দান করবেন। তারা পরকালে জান্নাত লাভ করবে। সেটাই আসল সফলতা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, +
++
++ +'বলুন, হে আমার মুমিন বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর। যারা এ দুনিয়াতে কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, ধৈর্যশীলদেরকেই তো তাদের পুরস্কার পূর্ণরূপে দেয়া হবে বিনা হিসেবে।' (আয-যুমার, আয়াত: ১০)
+
+ ★ ধৈর্য এর পরীক্ষা +
++ মুমিনদের ওপর বিপদ-আপদ বেশি আসে। কাফিরদের কে আল্লাহ দুনিয়াতে অবকাশ দেন। বিপদআপদ মূলত আল্লাহ এর থেকে পাঠান পরীক্ষা। একজন মুমিন ব্যাক্তি যত ধার্মিক হবে, তার পরীক্ষাও সেই অনুপাতে ততটা কঠিন হবে। এভাবে আল্লাহ তাকে পাপমুক্ত করে দেন। যারা এসব পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করেন, তারাই পরকালে পুরষ্কার লাভ করেন। নবী-রাসুলগণ ও প্রচুর পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। একটি হাদিসে এসেছে - +
++
++মুসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সাদ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেনঃ নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধাৰ্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না।
+( সুনান আত তিরমিজী, ২৩৯৮ )
+
+
+ আমাদের উচিত যেকোনো বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করা। আল্লাহ সকল ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আছেন। যে যত ইমানদার, তার বিপদ ততো বেশি। তাই কারও বিপদে পড়ার কারণে আল্লাহ তার উপর থেকে রহমত উঠিয়ে নিয়েছেন - এমন ভাবনা ঠিক না। আল্লাহ যাকে ভালবাসেন, তাকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন এবং এর মাধ্যমে তার পাপ মাফ করেন। এরফলে পাপমুক্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি জান্নাতের অধিকারী হন। আমরা বিভিন্ন নবীদের জীবনী দেখলে বুঝতে পারি, যে তারা বিভিন্ন কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে তারা সকল পরীক্ষায় ধৈর্য এর সহিত উত্তির্ণ হয়েছেন। + +
++
+ ★ শেষকথা +
++ ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ যা ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সকল মুমিনদের জীবনে গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি সহনশীলতা, স্থিরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং দুর্যোগের সময়ে আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরতা প্রদর্শন করে। ধৈর্যের পরিপূর্ণতা বোঝা, অধিকারী এবং শিক্ষামূলক সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই প্রবন্ধে করা হয়েছে। একটি ধৈর্যশীল মুমিন নিজেকে পরীক্ষার মধ্যে সংশোধন করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে সঠিক মার্গে ধারণ করে যাওয়ার মাধ্যমে অত্যুত্তম সাফল্য প্রাপ্ত করতে পারে। অতএব, আমাদের জীবনে ধৈর্য নিয়ে সঠিক ধারণা ও প্রয়োজন বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। +
+